শুক্রবার রাত ১০:৪২

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল

প্রথম আরব দেশ হিসেবে মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠাচ্ছে আমিরাত

সমাজ নিউজ ডেস্ক: জ্বালানি তেলের ব্যবসাকে বোধহয় আর যথেষ্ট মনে করছে না মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি এখন দৃষ্টি দিয়েছে মহাকাশে। মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে চায় আমিরাত। আসছে ১৪ জুলাই জাপানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপ তানেগাশিমা থেকে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করার কথা রয়েছে।

পাঁচ বছরের মতো সময় নিয়ে একটি মহাকাশযান তৈরি করেছে দেশটি। মানবহীন এই মহাকাশযানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘আমাল’। আরবিতে যার অর্থ ‘আশা’।আগামী মাসে মহাকাশযানটিতে জ্বালানি ভরা শুরু হবে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৪৯৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে মহাকাশযানটির সময় লাগবে আনুমানিক সাত মাস।

মঙ্গলগ্রহের এক বছর ৬৮৭ দিনে। এই পুরো সময় ধরে মঙ্গলগ্রহেরে কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে মহাকাশযানটি। মঙ্গলগ্রহেরে কক্ষপথ একবার ঘুরতে এর সময় লাগবে ৫৫ ঘণ্টা।

গ্রহের চারদিকে ঘুরে ঘুরে গোলাপি রঙের এই গ্রহটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে আমাল। দেশটির তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য এই মিশন ‘স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় যুক্ত হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করবে বলে মনে করছেন এই প্রকল্পের পরিচালক সারাহ আল আমিরি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার এ আশার কথা জানান।

আগামী ১৪ জুলাই জাপানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপ তানেগাশিমা থেকে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করার কথা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে। কেননা এই যাত্রা ইতোমধ্যে একবার পিছিয়েছে।

জাপানিজ রকেট দ্বারা চালিত মহাকাশযানটিতে তিন ধরনের সেন্সর থাকবে। যার কাজ হবে মঙ্গলগ্রহের জটিল বায়ুমণ্ডল পরিমাপ করা। মহাকাশযানটিতে খুব শক্তিশালী রেজুলুশন সম্বলিত একটি মাল্টিব্যান্ড ক্যামেরাও থাকবে, যা সূক্ষ্ম বস্তুর ছবি তুলতে সক্ষম।

গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ ও নিম্নভাগ পরিমাপ করার জন্য থাকবে একটি ইনফ্রারেড স্পেকটোমিটার, যা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি। তৃতীয় আরেকটি সেন্সর গ্রহটির অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের মাত্রা পরিমাপ করবে।

সারাহ আল আমিরি বলেছেন, ‘এই মিশনের অন্যতম কাজ হলো পানি তৈরিতে দরকার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান (অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন) কেন মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে থাকতে পারছে না তা বোঝার চেষ্টা করা।’

যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের পরিচালক স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড বলেছেন, ‘এর আগে যত মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হয়েছে সেগুলো ভূতত্ত্বের দিকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু এবার মঙ্গলগ্রহের জলবায়ু সম্পর্কে একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।’

মহাকাশবিজ্ঞানে আরব আমিরাতের যোগসূত্র নতুন নয়। এর আগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার জন্য একটি রকেট পাঠিয়েছিল দেশটি। গতবছর রাশিয়ান একটি মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন আমিরাতের প্রথম কোনো নাগরিক।

তবে প্রথম আরব হিসেবে মহাকাশে গেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ সুলতান বিন সালমান আল-সৌদ। ১৯৮৫ সালে মার্কিন একটি মহাকাশযানে করে গিয়েছিলেন তিনি।

তবে আরব আমিরাতের মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠানোর এই চেষ্টা যেকোনো আরব দেশের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির মহাকাশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিকা গ্রেডি বলছেন, মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে আমিরাতের এই মিশন।
তিনি বলেছেন, ‘মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে একটি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই মিশন একটি সত্যিকার সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো পদক্ষেপ। কারণ এতে বোঝা যায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং মার্কিন নাসা ছাড়া অন্য কোনো দেশও মঙ্গলগ্রহে যেতে পারে। আশা করি, তারা সেখানে পৌঁছাতে পারবে। তবে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো মিশন ব্যর্থ হওয়ার একটি লম্বা ইতিহাস রয়েছে।’

তবে এই প্রকল্পের নেতৃবৃন্দ বিশ্বকে সেই আট শতাব্দী আগের আরব বিজ্ঞানীদের অগ্রসরতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। কেননা সেসময় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দিক থেকে তারাই ছিলেন সামনের সারিতে। আজকের দিনে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই মিশনের মাধ্যমে সেই সাংস্কৃতিক অহংকারকে আবারও উদ্দীপ্ত করতে চান দুবাইয়ের শাসক।

সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের ওপরে যে নির্ভরশীলতা তা থেকে নতুন কিছুতে সরে আসতে চায় দেশটি। যদি এই মিশন সফল হয় তবে দেশটি প্রতিষ্ঠার ঠিক ৫০ বছরে এসে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে