শুক্রবার রাত ১০:৪৮

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল

পার্কটিতে এখন আর মানুষের ঢল নামে না

একসময় বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে মানুষের ঢল নামতো মেহেরপুরের গড় পুকুর পার্কে। সেই পার্কটিতে এখন আর বিনোদনপ্রিয় মানুষের ঢল নামেনা।

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে পার্কটি আকর্ষনহীন। সেখানে কেউ বেড়াতেও আসে না। পার্কস্থলে বসেছে মুরগি ও মাছের আড়ৎ। দীর্ঘ সময়েও পুকুরপাড় সংস্কার না করায় পার্কটি তার শেষ আকর্ষণটুকুও হারিয়ে ফেলে।

অন্যদিকে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়েছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত বিনোদন সরঞ্জাম। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরসভার মানুষ।

তবে মেহেরপুরে একাধিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণে আশার কথা শোনালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন।

আশির দশকে এরশাদ সরকারের শাসন আমলে মেহেরপুর জেলা পরিষদের পিছনের জমিতে শিশুদের জন্য একটি পার্ক তৈরি করে শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী স্থাপন করা হয়। ওই পার্কটিতে শিশুরা কিছুটা হলেও বিনোদন পেত। কিন্তু পরবর্তী সরকার আমলে শিশুপার্কটিকে করা হয় জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন ও ডরমেটরির স্থান ।

মেহেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র বড় বাজারের পাশে অবস্থিত পৌর গড় পুকুরকে ঘিরে তৈরি করেন মিনিপার্ক। দৃষ্টি নন্দন নানা উপকরণ দিয়ে গড় পুকুরের চারপাশ শোভামণ্ডিত করা হয়। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয় বৈদ্যুতিক মটর চালিত নাগরদোলা। উপরে ক্যাবল কার আর পানিতে প্যাডেল চালিত স্পিড বোট। যা শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে আকর্ষণ করত। আশে-পাশে কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় গড় পুকুরের মিনিপার্কে ঈদ ও পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবের দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকতো। দিনের বেলায় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসত শিশু-কিশোরসহ বয়স্করা।

নির্মাণের দু’বছর যেতে না যেতেই কয়েকজন শিশু ক্যাবল কারে উঠে গড় পুকুরের মাঝখানে আটকে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দু’ঘন্টা চেষ্টা করে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করে। বিনোদনের পরিবর্তে ক্যাবল কার দর্শনার্থীদের কাছে এক ভীতিকর বাহন হিসেবে পরিচিতি পায়।

এ ধরণের ঘটনা পর পর দু’বার ঘটায় ২০০৮ সালের শেষের দিকে বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি। পার্কটি চালু করতে পৌর কর্তৃপক্ষের মাঝে দেখা দেয় অনিহা। আস্তে আস্তে দখলে চলে যায় গড় পুকরের পাড়। সেখানে বসে মাছ ও মুরগীর আড়ৎ। গড় পুকুর এলাকায় সৃষ্টি হয় নোংরা, দুর্গন্ধ ও জলাবদ্ধতা। এতে পার্কটি হারায় তার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। তখন থেকে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে পার্কের সব মূল্যবান সম্পদ। এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

শুধু শিশু-কিশোরদের বিনোদন নয়, বয়স্কদের সকালে হাঁটা ও ব্যায়াম করার একমাত্র আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল পার্কটি। বিভিন্ন উৎসবে আসা দর্শনার্থী কিংবা বিনোদন পিপাসুদের কাছ থেকে আয় হত বিপুল পরিমাণ অর্থ। পার্কটি বন্ধ হওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষের একটি আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি হতাশা দেখা দিয়েছে শিশুদের মাঝেও।

শিশু স্বর্ণ (১০) জানালো- ‘নাগরদোলা ও ক্যাবল কারে আমার চড়ার খুব ইচ্ছা। মেহেরপুরের এটি নেই। এগুলো চালু হলে স্কুলের টিফিনের টাকা না খেয়ে বন্ধুরা মিলে বিকেলে এগুলোতে চরতাম।’

এমন অনেক শিশুই মেহেরপুরে তাদের আনন্দের জন্য একটি পার্ক খুঁজে বেড়াচ্ছে।

মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু গড়পুকুরের পার্কটি চালু করার আশ্বাস  দিয়েছিলেন একাধিকবার। কিন্তু তা আশ্বাসই থেকে গেছে, কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে তিনি মেহেরপুরের প্রবেশদ্বারে কয়েকটি দর্শনীয় স্থাপনা তৈরি করে গেছেন।

মেহেরপুর পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়র শাহানুর রহমান রিটন বলেন- ‘অচিরেই পৌর গড় পুকুরকে ঘিরে শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হবে এবং ইতোমধ্যে ১৮ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয়েছে।’

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন- ‘অতিসত্বর মেহেরপুরের মুজিবনগরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিশ্বমানের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও আমঝুপি নীলকুঠিতে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদের মাধ্যমে একটি শিশুপার্ক তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে এসব বরাদ্দও পাওয়া গেছে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এসব কাজ করতে দেরি হচ্ছে।’







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে