শুক্রবার বিকাল ৩:৫৮

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল

‘দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভুল’

দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ভুল বলে আখ্যায়িত করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন জনগণ। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়িয়েছে।’

ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও মানুষের  দুর্ভোগ লাঘবে মঙ্গলবার থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাড়া-মহল্লার নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি। আগে দোকান খোলা রাখার সময়সীমা ছিল দুপুর ২টা পর্যন্ত।

রোজাকে সামনে রেখে তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী দোকানপাট খোলা থাকলেও সেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য দোকান মালিক ও ক্রেতা সাধারণকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা রাস্তায় চলাচল মানুষ যেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সেজন্য থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেছেন, ‘কোনো অবস্থাতেই বিকেল ৪টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া আর কোনো দোকান খোলা রাখা যাবে না। ফুটপাথে ইফতারসহ কোনো ধরনের পণ্য বিক্রি করা যাবে না। নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করে ব্যবসায়ীরা ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট থানাগুলো নিজ নিজ এলাকার সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করবে। কোথাও কোন ব্যত্যয় দেখা গেলে তা কঠোরভাবে দেখা হবে।’

দোকান খোলা রাখার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি টেলিফোনে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেছিল দোকান খোলা রাখার বিষয়ে। আর দোকান বন্ধের ঘোষণা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেয়নি। এটা পুলিশের কাজ। এতদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা যেত। রোজার কারণে সেটা বাড়িয়ে বিকেল ৪টা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব বাবলু সাহাকে কয়েক বার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ‘করোনার কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সাধারণ ছুটিতে কেনাবেচা বন্ধ থাকায় দোকান মালিকদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। অন্যদিকে, কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে দোকান খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। এ মুহূর্তে এর বেশি বলা সম্ভব নয়। সরকারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর এ নিয়ে কথা বলব।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘করোনা সংকটকালে দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তটা যেমন ঠিক হয়নি, তেমনই বিদ্যমান অবস্থায় এ ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ কেন, সবার অবস্থাই একই রকম। করোনা প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না আমার কাছে। যেসব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে সেগুলো কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা না হলে অবস্থা ভায়াবহ হতে পারে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেছেন, ‘দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানো ভুল সিদ্ধান্ত। যদি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এর কুফল খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়েছে তারা নির্ভর করেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরে থাকার ওপর। মানুষ যেখানেই নিয়মভঙ্গ করে ঘর থেকে বের হয়েছে, সেখানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মানুষ বাঁচলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেয়া যাবে। যদি মানুষই না থাকে তা হলে অর্থনীতি দিয়ে কী হবে?’

এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেলী সেলিনা আলম বলেন, ‘ভেবেছিলাম, এবার অন্তত রমজান মাসে রোজাদারগণ ঘরে ইফতার করবেন। বলাই তো হয়েছে, স্টে হোম। বুঝলাম না, বাড়িতে নিরাপদে বাস করা মানুষগুলোকে কেন ইফতার কেনার জন্য রেস্টুরেন্ট খুলে উৎসাহিত করা হলো?’







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে