শুক্রবার বিকাল ৪:০৮

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বসন্তকাল

কিশোরগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ১৪১ জন, ৯৩ জনই স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মী

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জে চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। জেলার অন্তত অর্ধেক সরকারি হাসপাতালে হানা দিয়েছে কভিড-১৯। করোনার ভয়াবহ থাবায় দিশেহারা অবস্থা স্বাস্থ্যবিভাগের। এ অবস্থায় জেলার পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এদিকে একদিনে (গত ২৪ ঘন্টায়) দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (ইউএইচএফপিও) ২২ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয় জেলায় নতুন করে আরও ৪৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানায়। এর মধ্যে অন্তত ৯০ ভাগ স্বাস্থ্যবিভাগে কর্মরত। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন । তাদের মধ্যে ৪১ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স ও ৪২ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আতাউর রহমান তাঁর ফেসবুক আইডিতে রাত ৮টার দিকে লিখেন. ‘ কেউ কি ভেবেছেন কিশোরগণঞ্জে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার এত বেশি কেন? স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি নাকি মানহীন পিপিই? এন-৯৫ মাস্কের ঘাটতি ? কী তাহলে কারণ? কর্তৃপক্ষ বা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি ভেবে দেখবেন কি? এর কি কারো দায় নেই? আর কত দিন এভাবে চললে হাসপাতালগুলো চিকিৎসক শূন্য হবে? ভবিষ্যতে কে দিবে চিকিৎসা? কারা চালাবে হাসপাতাল? সময় থাকতে নীতিনির্ধারকরা বসেন, কারণ বের করেন, মানুষদের বাচাঁন।’
মিঠামইনের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফী জানান, তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মিঠামইনে যে ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৫ জন স্বাস্থ্য বিভাগের। এর মধ্যে তিনিসহ ছয়জন চিকিৎসক রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. তানভির হাসান। তিনিসহ ওই হাসপতালে আরও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজিব জানান, ইটনা উপজেলায় আজ ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই স্বাস্থ্য বিভাগের।
তিনি বলেন, আমার নেগেটিভ এসেছে। আর অন্য তিন চিকিৎসকের পজেটিভ এসেছে। তাছাড়া দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন স্বাস্থ্যকর্মীর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে হাসপাতালের আরও তিনজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলায় আজ যে ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সবাই হাসপাতালের। এর মধ্যে একজন দন্তচিকিৎসক রয়েছেন। বাকিরা নার্স, অফিস স্টাফ, আয়া, পরিচ্ছন্ন কর্মী। সবমিলিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসকসহ মোট ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। ৮১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯ জনের রিপোর্ট এসেছে। বাকি ২২জনের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষার জন্য গত ১৭ এপ্রিল ১২৫ জনের নমুনা পাঠানো হয়। এর মধ্য রবিবার তিন উপজেলা ভৈরব, অষ্টগ্রাম ও হোসেনপুরের ৪০ জনের নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২৩ জন ছিল কভিড-১৯ পজেটিভ। বাকি ১০ উপজেলার যে ৮৫ জনের রিপোর্ট বাকি ছিল, সেগুলো থেকে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ৮২ জনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সবমিলিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৪১ জন চিকিৎসক ও বহু স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র আরো জানায়, একের পর এক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতাগুলোর চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত ১৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর, ইটনা, মিঠামইন, কটিয়াদী, তাড়াইল ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও করোনা হানা দিয়েছে। তাই জেলাজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবাও ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে পড়েছে। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ রোগীরা পড়ছে বেকায়দায়।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত কয়েকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব উপকরণ দেওয়া হয়েছে, এগুলো নিম্নমানের। এসব দিয়ে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায় না।
তারা আরো বলেন, যারা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সামনে থেকে লড়াই করবে। মনে হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে।
তবে আরেকটি সূত্র চিকিৎসকদের এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, চিকিৎসকদের আয় তো কম নয়, তাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। আর পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ ব্যক্তি উদ্যোগে কিনে নেওয়া চিকিৎসকের জন্য খুব কঠিন কাজ নয়। কাজেই এসব ব্যাপারে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদাসীনতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, সবমিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪১ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। মারা গেছেন একজন। মৃত ব্যক্তির বাড়ি জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়।
উপজেলাওয়ারী হিসেবে এ পর্যন্ত করিমগঞ্জ উপজেলায় ১৬ জন, ভৈরব উপজেলায় ৩৫ জন, ইটনা উপজেলায় ১১ জন, বাজিতপুরে ২ জন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৩ জন, তাড়াইল উপজেলায় ২১ জন, কুলিয়ারচরে ৭ জন, কটিয়াদীতে ১১ জন, মিঠামইনে ১৯ জন, অষ্টগ্রামে ৩ জন. হোসেনপুরে ২ জন ও নিকলীতে ১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে