করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৩৮৬ জন মারা গেলেন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৬১৭ জন। যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬ হাজার ৭৩৮ জনে।
বুধবার (২০ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন একটিসহ মোট ৪৩টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও ১১ হাজার ১৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ২০৭টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৩ হাজার ৮৫২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৬১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৭৩৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১৬ জন। এদের ১৩ জন পুরুষ, তিনজন নারী। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২১৪ জন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন পাঁচ হাজার ২০৭ জন।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, তিনজন নারী। সাতজন ঢাকা বিভাগের, পাঁচজন চট্টগ্রামের, তিনজন রংপুরের এবং একজন সিলেট বিভাগের। ১২ জন মারা গেছেন হাসপাতালে, চারজন মারা গেছেন বাসায়। বয়সের দিক থেকে একজন অনূর্ধ্ব ১০ বছরের, একজন ২১ থেকে ৩০ বছরের, একজন ত্রিশোর্ধ্ব, একজন চল্লিশোর্ধ্ব, পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, চারজন ষাটোর্ধ্ব, দুজন সত্তরোর্ধ্ব এবং একজন ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী।
গত মঙ্গলবারের (১৯ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন মারা গেছেন। আট হাজার ৪৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ২৫১ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা কমলেও যেমন বেড়েছে নমুনা পরীক্ষা, তেমনি হয়েছে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ডও। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৬০২ জনের। এ তথ্য জানানো হয় গত ১৮ মের বুলেটিনে।
বুধবারের বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা আরও জানান, করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় দেশে সুস্থতার হার ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বুলেটিনে জানানো হয, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩০০ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন তিন হাজার ৮১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১০০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৮৯৩ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। মোট আইসোলেশন শয্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০৬টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে চার হাজার ১১ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫০২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ২৮৭ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৯৮ হাজার ৫৬২ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫২ হাজার ৯৪১ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধকোটি। মৃতের সংখ্যা সোয়া তিন লাখ ছাড়িয়েছে। তবে পৌনে ২০ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।