রবিবার রাত ৯:০০

৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শরৎকাল

বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি

কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের বাধায় বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ভারত। এ বিষয়ে দিল্লির পক্ষ থেকে ‘কড়া ভাষায়’ চিঠি দিয়েও মমতা ব্যানার্জিকে স্থলবন্দর না খোলার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেনি দেশটির সরকার। ফলে তিস্তার পানি ইস্যুতে টানাপোড়েনের পর এবার দু’দেশের বাণিজ্যে সম্পর্কের মধ্যেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

বিকল্প পথ হিসেবে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য এখন রেলপথকেই বেছে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার লকডাউন করে রেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদিও রাজি হয়েছিল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মমতা ব্যানার্জি রাজি হচ্ছেন না।’

‘উনি কোনো ট্রাকই আসতে দিচ্ছেন না। কেউ যদি আসে তারা ফেরত যেতে পারছেন না। সেখানে ১৪ দিনের (কোয়ারেন্টাইন) কোনো ব্যাপার নয়। যিনি আসবেন তিনি যেতেই পারবেন না! ফলে হাজার খানেক ট্রাক ওখানে লাইন ধরে বসে আছে,’ বলেন তিনি।

ড. মোমেন বলেন, ‘একবার আলোচনা হলো দু’দেশের জিরো পয়েন্টে ট্রাক থেকে মালামাল ওঠা-নামা করা হবে। তাতে দেখা যায়, মাত্র চার-পাঁচটি ট্রাক পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু তাতেও পশ্চিমবঙ্গ রাজি নয়। সবাই লকডাউন, করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত।’

‘তবে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছিল। বর্তমানে স্থলবন্দরের বিকল্প হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের চারটি পথে রেল যোগাযোগ চালু আছে। সেসব পথে এখন মালামাল আসা-যাওয়া করছে,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ঠিক কবে স্থলবন্দরগুলো চালু হবে সে কথা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির যুক্তি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এখন পেট্রাপোল বা হিলির মতো স্থলবন্দরগুলো চালু করেনি। গত মাসের শেষ দিন সীমিত আকারে চালু হওয়ার তিনদিন পরই পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরে স্থানীয়দের বাধায় মালপত্র ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচ্ছন্ন সায় ছিল।

এদিকে বাংলাদেশে মালপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘ভারতের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা’র কথা রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা। চিঠিতে পণ্য পরিবহনে অবিলম্বে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তাতে এতটুকু টলেনি মমতা ব্যানার্জি ও তার সরকার।

গত ৫ মে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনে গত ২৪ এপ্রিল অনুমতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহন এখনো শুরু করেনি। ফলে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিপুলসংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন বর্ডার ক্রসিং পোস্টে আটকে রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশে যেসব ট্রাক ও এর চালক পণ্য সরবরাহ করতে গিয়েছিলেন তারাও সীমান্তের ওপাড়ে আটকে রয়েছেন। তাদেরও ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এতে বাংলাদেশের প্রতি যেমন ভারতের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে তেমনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অবমাননা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শুধু আইন লঙ্ঘন করেনি, তা ভারতের সংবিধান লঙ্ঘনেরও শামিল।

এ বিষয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাটাশে (প্রেস) দেবব্রত পাল বলেন, ‘ভারত ফেডারেল রাষ্ট্র। এর রাজ্যগুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনই স্থলবন্দর খুলতে রাজি নয়। কবে নাগাদ এটি খুলবে সেটি বলাও যাচ্ছে না।’

কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা করছে বলেও জানান তিনি।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে