ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সঙ্কট সমাধানে এবার এগিয়ে আসলো চীন। সংঘাত বন্ধে দু’পক্ষের মধ্যে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হবে জানিয়ে দ্বন্দ্ব অবসানে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং। মঙ্গলবার চীন সফররত ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এদিকে, পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আরও এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের পর ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা আল আকসা মসজিদের বাইরে জড়ো হয়ে ইসরাইল-বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। সম্প্রতি মসজিদটিতে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের বিরোধিতা করে এ বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ইসরাইলি পুলিশ ফিলিস্তিনিদের ধাওয়া দিলে দু’পক্ষের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ে। এ ঘটনায় আল আকসা মসজিদের ইমামসহ অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়।
গত সপ্তাহে ৩ ফিলিস্তিনির গুলিতে ২ ইসরাইলি পুলিশ নিহত ও নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে ওই তিন অস্ত্রধারীর মৃত্যুর ঘটনায় এ অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জেরে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আল আকসা মসজিদ দু’দিনের বন্ধ রাখার পর রোববার তা খুলে দেয়া হয়। মসজিদে মেটাল ডিটেক্টর ও গোপন ক্যামেরা স্থাপনের বিরোধিতা করে অবিলম্বে এ ধরণের কড়াকড়ি প্রত্যাহারের দাবিতে মসজিদের ভেতরে নামাজ আদায় থেকে বিরত থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ফিলিস্তিনিরা।
এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আল আকসা দখলে নেয়ার অপকৌশল হিসেবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ কঠোরতা আরোপ করেছে। তারা যে আর্চওয়ে দিয়ে আমাদের মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে বলছেন, আমরা তা মেনে নেবো না।’
আরেক জন বলেন, ‘যারা ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্ধারিত প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমদের মসজিদে আমরা প্রবেশ করবো, ওরা তাতে বাধা দেয়ার কে।’
ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন করে সংঘাত উস্কে দেয়ার অভিযোগ তুলে তেলআবিবকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী।
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোরতা আরোপ করে যাচ্ছে ইসরাইল। সম্প্রতি মুসল্লিদের আল আকসায় প্রবেশে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, আমরা তা কিছুতেই মেনে নেবো না। তারা এভাবে আমাদের জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে না।’
এদিকে, পশ্চিম তীরের হেবরনে মঙ্গলবার ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরও এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২৯ বছর বয়সী ওই ফিলিস্তিনি ছুরি নিয়ে হামলার চেষ্টাকালে তাকে গুলি করা হয় বলে দাবি করে পুলিশ।
এ অবস্থায় কয়েক দশক ধরে চলা ইসরাইল-ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব অবসানে প্রথমবারের মত উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে চীন। এবছরের শেষদিকে একটি সম্মেলন আয়োজনের কথা জানিয়েছে বেইজিং। রোববার বেইজিং-এ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের আশা থাকবে দ্রুত ইসরাইল-ফিলিস্তিন একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাবে। আর চীন মধ্যপ্রাচ্যের এই দ্বন্দ্ব অবসানে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
বৈঠকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধানে চীনকে আরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গত মার্চে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর চীন সফরের পর এবার মাহমুদ আব্বাসের বেইজিং সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।