পাকিস্তানের তিন শাসক খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা এবং মুহাম্মদ আইয়ুব খানকে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ‘বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাহার আন্দোলন পরিষদ’ সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায়।
একই সঙ্গে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জনসচেতনতামূলক অবস্থান কর্মসূচি, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ড. সাখাওয়াৎ আনসারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন এবং অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। যাদেরকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে, ধরে নিতে হবে যে, তারা রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু পাকিস্তান আমলের নয় জনের মধ্যে তিনজনকে ডিগ্রি দেয়া নিয়ে আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করছি। এমন তিনজন হলো পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান।’
তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৪৮ এবং ৫২-এর দুই পর্বে খাজা নাজিমুদ্দিনের ভূমিকা ছিল বাংলার বিরুদ্ধে এবং বাঙালিবিরোধী। তিনি বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন বাঙ্গালীদের সাথে। ইস্কান্দার মির্জার ছিলেন অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী। আইয়ুব খান ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু। তিনি প্রথম বিডি মেম্বারদের মাধ্যমে হ্যা/না পদ্ধতির প্রয়োগে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াই ১৯৬০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি প্রথম এনএসএফ নামের পেটুয়া বাহিনী তৈরি করেন।
অধ্যাপক হারুনার রশিদ বলেন, ‘এরকম তিনজন কুখ্যাত ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিগ্রি প্রদান বাঙালি সংস্কৃতির চেতনার বিরুদ্ধে আঘাত। এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অসম্মানজনক। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে আঘাত হানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক চেতনা রাখতে এই কলঙ্ক তিলক মুছে ফেলতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম হারুনার রশিদ, সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান নমিতা মন্ডল, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ আনসারী এবং সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রমথ মিস্ত্রি।