টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে দেওয়া রায়ে নাইকোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত-ইকসিড।
শনিবার (২ মে) সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইকসিডের রায়ের ফলে নাইকোর দাবি করা পাওনা পরিশোধ করতে হবে না বাংলাদেশকে। এছাড়া ব্লক ৯ বা কুমিল্লার বাঙ্গুরায় নাইকোর সম্পত্তিও বাংলাদেশ নিয়ে নিতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই শুনানিতে আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ যে ক্ষতিপূরণ পাবে, তার পরিমাণ নির্ধারণ হতে পারে।
রোববার (৩ মে) দুপুরে এই রায়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এজন্য ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপস জুমের মাধ্যমে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দরপত্র ছাড়াই ছাতকসহ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারকে একটি প্রস্তাব দেয় নাইকো। জ্বালানি বিভাগ এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে তিনটি নির্দেশনা দেয়।
এতে বলা হয়, বাপেক্স এবং নাইকো যৌথভাবে সমীক্ষা করে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। এর পর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্রে কেউ নাইকোর চেয়েও আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিলে তারাই গ্যাসক্ষেত্র ইজারা পাবে।
এ ব্যাপারে বাপেক্স মত দেয়, ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার সুযোগ নেই। কারণ সেখানে কোনো গ্যাসই তোলা হয়নি। অন্যদিকে, তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট মত দেয়, ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা যায়। সরকার এই মত আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে বাপেক্স। গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খননকালে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে।
দুর্ঘটনার কারণে মজুদ গ্যাস পুড়ে যায়। আশপাশের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ জন্য নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে পেট্রোবাংলা, যা দিতে নাইকো অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষতিপূরণ আদায়ে পেট্রোবাংলা নাইকোর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে স্থানীয় নিম্ন আদালতে মামলা করে।
নাইকোর আটকে রাখা অর্থ আদায় এবং ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে ইকসিডে দুটি মামলা করে। ২০১৪ সালে এক রায়ে ইকসিড পেট্রোবাংলাকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্রের পাওনা পরিশোধ করতে বলে।
২০০৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সরবরাহ করা গ্যাসের দাম হিসেবে ২১৬ কোটি টাকা পাবে নাইকো। এর সঙ্গে ২০০৭ সালের ১৪ মের পরবর্তী সময়ের জন্য নির্ধারিত হারে সুদ পরিশোধ করার নির্দেশও দেয় ইকসিড।
চুক্তি সম্পাদনে দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ ইকসিডে একটি অভিযোগ দাখিল করে পেট্রোবাংলা। ২৬ মে ইকসিড নাইকোর দুর্নীতির আরও তথ্য এবং নাইকো-বাপেক্স যৌথ চুক্তি (জেভিএ) ও গ্যাস ক্রয় চুক্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত সবার নামের তালিকা চায়।
গ্যাসক্ষেত্র ইজারা প্রক্রিয়ায় জড়িত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ২৬ জনের তালিকা পেট্রোবাংলা ওই বছরের ১৪ জুন ইকসিডে পাঠায়। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত দুর্নীতির আরও তথ্য চেয়ে ২৯ জুলাই আরেকটি নির্দেশনা জারি করে। এরপর বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।