রবিবার রাত ৮:৩২

৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শরৎকাল

নরসিংদীতে ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ, বেচাকেনা হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা

লটকনে লাখপতি নরসিংদীর চাষিরা নরসিংদীর পাহাড়ি এলাকার কৃষকের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে এক সময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করতে পারায় এই ফলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় দিনে দিনে সোনালী ভবিষ্যৎ গড়ে উঠছে এখানকার লটকন চাষিদের। ঘুঁচে যাচ্ছে বেকারত্বের গ্লানিও। লটকন চাষ করে লাখপতি হচ্ছেন এখানকার চাষিরা। নরসিংদীর স্থানীয় বাজারে চলতি  মৌসুমে ১৬ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার লটকন বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. লতাফত হোসেন। লটকন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামের প্রয়াত হাসান আলী সরকার এলাকায় স্বল্প পরিসরে প্রথম লটকনের আবাদ শুরু করেন। এরপর থেকে বেলাবো ও শিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লালমাটির এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটতে থাকে। দুই যুগ আগেও নরসিংদীর লালমাটি অধ্যুষিত (স্থানীয়ভাবে পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত) শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার হাতেগোনা গ্রামের ঝোঁপ ঝাড় ও জঙ্গলে অযন্ত অবহেলায় বেড়ে উঠতো লটকন গাছ। কোনও কোনও গ্রামের বাড়ির আঙিনায়ও দেখা মিলতো হাতে গোনা লটকন গাছ। বাজারে অপ্রচলিত এই ফলের চাহিদা না থাকায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষের কথা ভাবতেন না এখানকার কেউ।
এরই মধ্যে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ লটকনের চাহিদা বাড়তে থাকে বাজারে। এতে শুরু হয় লটকনের ন্যায্যমূল্য পাওয়া। দিনের পর দিন বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় লটকনের চাষ বাড়তে থাকে। এসব অঞ্চলে এখন বাড়ির আঙিনায় পড়ে থাকা পতিত জমি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হচ্ছে। কাঁঠালের পাশাপাশি এখন এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে লটকন। লটকন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর পাশাপাশি, বেকার সমস্যার সমাধান করতে  পেরেছেন স্থানীয়রা। প্রতিবছর লটকন বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয়রা। লটকনে লাখপতি নরসিংদীর চাষিরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে নরসিংদীর এই সুস্বাদু ফল।
মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে জেলার মরজাল ও শিবপুর বাজারে গড়ে উঠেছে লটকনের বৃহৎ বাজার। প্রতিদিন ভোরে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লটকন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে এসব লটকন রফতানি হচ্ছে বিদেশের বাজারেও। অনেকে সরাসরি জমি থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন দেশ-বিদেশের বাজারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার লাল রংয়ের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটিও লটকন চাষের উপযোগী। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রধান কা-গুলোতে ছড়ায় ছড়ায় ফলন হয় এই লটকনের। গাছে ফলন ধরার পর লটকনের সবুজ বাগান ধারণ করে হলুদ রঙে। চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। বিগত বছর জেলার ৫৮০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছিল। বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতার বাইরেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে লটকন গাছ রয়েছে যা কৃষি বিভাগের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করা নেই।
লটকনে লাখপতি নরসিংদীর চাষিরা চলতি বছর ১৬ হাজার ৮ ২৭ মেট্রিক টন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৬ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামের মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘আমি চাকরির পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় পতিত পড়ে থাকা ২ একর জমিতে লটকন চাষ করেছি। এ বছর অন্যান্য চাষিদের ফলন আশানুরূপ না হলেও আমার বাগানে আশাব্যাঞ্জক ফল পেয়েছি। দামও পেয়েছি সন্তোষজনক, সাড়ে ৫ লাখ টাকায় লটকন জমিতেই বিক্রি করে দিয়েছি।’
একই গ্রামের অপর লটকন চাষি নুরুল হুদা বলেন, ‘এ বছর লটকনের ফলন কম হলেও এখানকার লটকন স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ লটকন আড়াই থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।’
শিবপুর উপজেলার অষ্টআনী গ্রামের লটকন চাষি সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘লটকন চাষে তুলনামূলকভাবে খরচ খুব কম, শ্রমও দিতে হয় কম। লটকন চাষ করতে করতে আমরা অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছি। রোগ ব্যাধি নির্মূলে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারছি।’ নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত  হোসেন বলেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রফতানি হওয়ায় লটকনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে দিন দিন লটকন চাষের প্রসার ঘটছে। স্থানীয় বাজারে প্রায় ২০ কোটি টাকার লটকন বেচাকেনা হবে এবং এর মধ্যে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার লটকন বিদেশে রফতানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে