সোমবার রাত ১:৫২

৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শরৎকাল

নরসিংদীতে তিন সাংবাদিকের মুক্তি দাবিতে ডিসির কাছে স্মারকলিপি

সমাজ ডেস্ক: নরসিংদীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার তিন সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ৩ মে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।
জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে এই স্মারকলিপি তুলে দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মাখন দাস ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল পারভেজ।
এর আগে বেলা ১১টায় নরসিংদী প্রেসক্লাবে করণীয় ঠিক করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত শতাধিক সাংবাদিক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা ওই মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাংবাদিকেরা। সেখানে স্থানীয় সাংবাদিকেরা গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে তথ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবর ওই স্মারকলিপি দেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম বাদী হয়ে পলাশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক রমজান আলী প্রামাণিক (৪৫), একই পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শান্ত বণিক (৩৫) এবং অনলাইন পোর্টাল নরসিংদী প্রতিদিনের প্রকাশক ও সম্পাদক খন্দকার শাহিনকে (৩২) আসামি করা হয়। রাতেই পুলিশের তিনটি পৃথক অভিযানে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার সকালেই তিন সাংবাদিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশের দাবি, সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না বলেই তাঁর বরাত দিয়ে ভুল বক্তব্য প্রকাশ করা ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। অথচ জহিরুল আলম এমন কোনো বক্তব্য তিনি দেননি এবং মুঠোফোনে বা সরাসরি ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগই হয়নি। তাঁর বরাত দিয়ে এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর ওপর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি মামলাটি করেন।
গত ২৯ এপ্রিল বুধবার বিকেলে ঘোড়াশালে পুলিশের হেফাজত থেকে ফিরে যাওয়ার পর হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মান্নান (৪০) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, চলমান লকডাউনের সময় অটোরিকশা নিয়ে সড়কে বের হওয়ায় মান্নানকে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘোড়াশাল ফাঁড়ির পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে। এতে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় অটোরিকশাচালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য ছিল, মান্নানের হৃদ্রোগ ছিল, তাঁকে সড়কে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ওই সিএনজি চালিয়ে পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের কালীগঞ্জের দক্ষিণ খলাপাড়া এলাকায় গিয়ে অসুস্থ হন। পরে সন্ধ্যার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর পায় পুলিশ।
স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাষ্য, সংবাদ সঠিক না হলে প্রতিবাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের নৈতিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করার সুযোগ। সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের স্বাধীনতারও পরিপন্থী। দ্রুত এই তিন সাংবাদিকের মুক্তি চান তাঁরা।
নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মাখন দাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে, ওই রাতেই গ্রেপ্তার করে পরদিন সকালে জানাজানি হওয়ার আগেই তিন সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নরসিংদীর সাংবাদিক সমাজ ক্ষুব্ধ। আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই তিন সাংবাদিককে আমরা মুক্ত দেখতে চাই। নতুবা আরও কঠিন কর্মসূচি নিতে আমরা বাধ্য হব।’
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘এই মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে কিছুই জানানো হয়নি। এই স্মারকলিপি আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেব এবং কোন প্রক্রিয়ায় ওই তিন সাংবাদিককে মুক্ত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন তিনি।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে