সমাজ ডেস্ক : নরসিংদী জেলায় আরও (১৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ৩০ জন ব্যক্তি নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শণাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলার ৬ উপজেলায় সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৪ জনে। সোমবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. ইব্রাহীম টিটন।
জেলাজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে যারা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে ওই তালিকার প্রায় অর্ধেকই স্বাস্থ্যকর্মী। গত শনিবার করা সর্বশেষ হিসেবে থেকে দেখা যায়, আক্রান্ত ১০৪ জনের মধ্যে চারজন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের নানা পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৬ জন। এতে জেলার সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
গত শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তদের তালিকা আপডেট করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই তালিকা পর্যালোচনা করে জানা গেছে, আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬ জন কর্মকর্তা ও ১৪ জন কর্মচারী এবং ১২ জন নার্স রয়েছেন। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাই নরসিংদীর দুইটি প্রধান হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কর্মী। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্ট, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, গাড়িচালক, মালী, বাবুর্চি ও সুইপারের মত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানায়, শনিবার দুপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ৭৭ জনের নমুনা রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রিসার্চ সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ওই ফলাফল হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও আমরা পেয়েছি সোমবার সকালে। ওই ফলাফলে ৩০ জন ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২২ জন ও রায়পুরার ৮ জন রয়েছেন। গতকাল পাঠানো নমুনাগুলোর ফলাফল আমরা এখনো হাতে পাইনি। তবে, ফলাফলের হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। অন্যদিকে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করাসহ তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইমরুল কায়েস জানান, এ পর্যন্ত জেলার মোট ৪৯৪ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা শেষে ১৩৪ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ৭০ জন , রায়পুরায় ২৬ জন, শিবপুরে ১৭ জন, বেলাবতে ১১ জন, পলাশে ৫ জন ও মনোহরদীতে ৫ জন রয়েছেন। তবে এরই মধ্যে নরসিংদী সদর ও পলাশের দুই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বর্তমানে সুস্থ্য আছেন। জেলায় প্রায় ৮ শতাধিক ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে কেউ নেই। বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন প্রায় ৫০ জন। করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তি বা স্বজনদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল পলাশ উপজেলায় জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। পরদিন রায়পুরা উপজেলায় আরও একজনকে করোনা আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা দুজনেই নারায়ণগঞ্জ থেকে আক্রান্ত হয়ে নরসিংদীতে ফিরেছিলেন। ওই রাতেই ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের এক কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হিসেবে শণাক্ত হন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হন। কয়েকদিনের বিরতির পর গত ১৩ এপ্রিল সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ ১৬ জন একদিনেই করোনা আক্রান্ত হন। পরদিন আক্রান্ত হন আরও ৮ জন। গত ১৫ এপ্রিলে নতুন করে আক্রান্ত হন ১৫ জন। পরদিন আরও ২১ জন। ১৭ এপ্রিল শনাক্ত করা হয় ২৭ জনকে। পরদিন আরও ১২ জন। এর একদিন পর সোমবার জানানো হয় ৩০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর। করোনা সংক্রমণের হারের দিক থেকে ক্রমে ক্রমে দেশের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠছে নরসিংদী।
সিভিল সার্জন মো. ইব্রাহীম টিটন জানান, প্রথম দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে জেলায় করোনাভাইরাস প্রবেশ করে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগেরও কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা-যাওয়া করেন, হয়তো তাদের মাধ্যমেই স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের আক্রান্ত কর্মীদের সংখ্যা রীতিমত আতঙ্কের হয়ে উঠায় আমি নিজেও বাসায় থেকে অফিস করছি। স্বাস্থ্য বিভাগের এত কর্মী একসাথে আক্রান্ত হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন অসুবিধায় আমাদের পড়তে হচ্ছে। জেলায় প্রতিদিন যেভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে, খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমরা আছি।
নরসিংদীতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের অর্ধেকই স্বাস্থ্যকর্মী
প্রকাশ : এপ্রি ২১, ২০২০ | Comments Off on নরসিংদীতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের অর্ধেকই স্বাস্থ্যকর্মী