নওগাঁ-জেলা প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের মধ্যে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁ। এখানে রয়েছে ধান চালের সবচেয়ে বড় মোকাম। জেলার চালকলগুলোতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জনবল সংকটে চাল উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। অন্যদিকে পরিবহন জটিলতা ও হঠাৎ করে মোকামে চাহিদা কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাল সরবরাহ আগের তুলনায় ৩০ ভাগ কমে গেছে। এতে করে কেজিতে চালের দাম কমেছে ৪ থেকে ৫ টাকা।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপ এবং ধান চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি বছর ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়। জেলার প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। করোনার পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলায় সাধারণত প্রতিদিন ৭০/৮০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হতো। বিগত ১৫-২০ দিন আগে বেশ কয়েকদিন মোটা চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবত মোকামে চালের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।
বর্তমান বাজারে ব্রি-২৮ চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। স্বর্ণা-৫ চালের দাম ১ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। যা পূর্বে ছিল ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকা। মিনিকেট নতুন চালের দাম ২ হাজার ১৫০ টাকা। যা পূর্বে ছিল পুরাতন চাল ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। নাজিরশাইল চালের দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
তবে বর্তমান কক্সবাজারের উখিয়া ছাড়া দেশের অন্য কোনো মোকামে চালের চাহিদা না থাকায় দিন দিন চালের দাম কমে যাচ্ছে। মোকামে চালের চাহিদা না থাকা ও নতুন ধান বাজারে আসায় ধানের দাম কমে যাওয়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা বাজারে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ব্রি-২৮ চালের দাম প্রতি কেজি ৪১-৪২ টাকা। স্বর্ণা-৫ ৩৮ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৪২ টাকা। মিনিকেট নতুন চাল ৪৪ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৫২ টাকা। নাজিরশাইল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি এবং দাম অপরিবর্তিত।
মেসার্স ফারিহা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মিলের নিয়মিত শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজে না আসায় চাল উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়াও লকডাউনের কারণে নওগাঁ থেকে অন্যান্য জেলার মোকামে চাল পাঠানোর জন্য পরিবহন সংকট হওয়ায় চাল সরবরাহ কমে গেছে। তবে ঢাকার মোকামের চাইতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আতপ চালের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৯৬০টি চালকল চলমান আছে। এর মধ্যে হাসকিং ৯০৫টি ও অটোমেটিক ৫৫টি। যেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সব শ্রমিক কাজে না আসায় চালকলগুলো চালু করতে পারছেন না মিলাররা। এছাড়া লকডাউনের কারণে ধান চাল পরিবহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্নভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
নওগাঁ ধান চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, চলমান লকডাউন এবং করোনা আতঙ্কে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক চালকল এখনও চালু হয়নি। এরপরও যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হচ্ছে মোকামে পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় দিন দিন দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে পুরো দমে ধানকাটা শুরু হয়েছে। সাধারণত বছরের এই মৌসুমে ধান ও চালের দাম কমে যায়। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে চালকলগুলো পুরো দমে চালু করা যাবে। এছাড়া সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হলে ধান চালের বাজার আবারও স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।