উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাড়ম্বরে সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির নেতা কিম জং-উনের উপস্থিতিতে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার আগে কুচকাওয়াজের আয়োজন করে দেশটি। এ ধরনের ঘটনা বিরল বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এই সামরিক কুচকাওয়াজে দৈত্যাকার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বে খুব বেশি নেই। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির মধ্যে এদিন উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার সেনা মাস্ক ছাড়াই কুচকাওয়াজে অংশ নেন।
এ কুচকাওয়াজে কোনো গণমাধ্যম কিংবা বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট সামরিক বিশ্লেষকদের উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া ভিডিও ফুটেজের ওপরই ভরসা করে থাকতে হয়েছে। কাটছাঁট করা ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ধূসর রঙের পশ্চিমা ধাঁচের স্যুট পরে শিশুদের কাছ থেকে ফুল গ্রহণ করছেন কিম জং-উন।
কুচকাওয়াজে দেওয়া বক্তব্যে কিম বলেন, ‘আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষার’ জন্য উত্তর কোরিয়া তার সামরিক ‘শক্তিমত্তা বাড়ানো’ অব্যাহত রাখবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে কিম জং-উন বলেছিলেন, তাঁরা একটি নতুন অস্ত্র বানিয়েছেন। সে অস্ত্র তাঁরা সবাইকে দেখাবেন। শনিবারের কুচকাওয়াজে যে ‘দৈত্যাকার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র’ প্রদর্শন করা হয়েছে, কিম জং-উন এর কথাই গত বছর বলেছিলেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
এ ছাড়া কিম উত্তর কোরিয়ার কোনো নাগরিক করোনায় আক্রান্ত না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
কিম বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এই দুষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে যারা লড়ছে, তাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’
এদিকে, উত্তর কোরিয়ায় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না থাকার কথা বললেও সারা দেশে কড়া বিধিনিষেধ জারি রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন কিম।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ায় কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়টি সত্যি না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
উত্তর কোরিয়া যাতে আর পারমাণবিক অস্ত্র না বানায়, সে জন্য তাদের অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক পথে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ধ্বংস করে ফেলতে অনুরোধ করে। কিন্তু অনেকেরই ধারণা ছিল, উত্তর কোরিয়া গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে চলেছে।
বিশ বছর আগে প্রথমবার উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা বৈঠকে বসেন। ২০০০ সালের ১৩ জুন ওই বৈঠক হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জুং চেষ্টা করেছিলেন, যাতে প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান ঘটে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ উদ্যোগের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
কিম দায়ে জুংয়ের সেই প্রচেষ্টাকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছিল, তবে সমালোচনাও হয়েছিল নানা মহল থেকে। অনেকের ধারণা, দুই কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় লাভ হয়েছিল মূলত উত্তর কোরিয়ার। এর ফলে তারা যে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেছিল, তা তারা পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পে কাজে লাগিয়েছিল।