রাজস্থানের রাইকা সম্প্রদায়ের শত বছরের উট পালার প্রথা এখন হুমকির মুখে৷ লাভজনক না হওয়ায় উট পালার উপর থেকে আগ্রহ অনেকের কমে যাচ্ছে৷ তবে তাঁদের আশার আলো দেখাচ্ছেন এক জার্মান৷
রাইকা জনগোষ্ঠী গত কয়েক শতক ধরে রাজস্থানে উট পালন করছে৷ অনেকের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর শিব নিজেই এই রাইকা সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন, যাঁদের কাজ হচ্ছে শুধু উট পালন করা৷ তবে সময় বদলেছে৷ রাইকাদের প্রথাগত জীবনযাপন এখন হুমকির মুখে৷
কৃষিকাজে এখন মেশিন ব্যবহার করে অনেককিছু করা যায়, যা করতে আগে উটের দরকার হতো৷ ফলে উটের প্রয়োজনীয়তা দ্রুত কমছে৷ গত ত্রিশ বছরে রাজস্থানে উটের বংশবৃদ্ধিও নাটকীয়ভাবে কমেছে৷ ভানওয়ারলাল রাইকার উটের পালও ছোট হয়ে গেছে৷ তাঁর বাবার কাছে এর দ্বিগুন উট ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই ঐতিহ্য বংশানুক্রমে চলছে৷ কিন্তু যদি আয় না থাকে, তাহলে আমরা এই ঐতিহ্য কিভাবে ধরে রাখবো? তরুণদের জীবিকার আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে হচ্ছে৷ আমার সন্তানরা স্কুলে যায়৷ আর সেজন্য আমার প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ হয়৷ যদি আমরা উট পেলে আর জীবিকা নির্বাহ করতে না পারি, তাহলে আমরা টিকে থাকবো কিভাবে?”
ইলসা-ক্যোঁহলার-রোলেফসন একজন জাতিবিদ এবং পশুচিকিত্সক৷ হানোয়ান্ত সিং রাঠোরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, যেটি উট পালকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে৷ রাইকা এবং তাঁদের উটের জন্য এটি একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ৷ তিনি বলেন, ‘‘উট পশুচারণ নানাভাবে গাছ সংরক্ষণে সহায়তা করে৷ অনেক গাছ শুধুমাত্র জাবর কাটা পশুর সহায়তায় অঙ্কুরিত হতে পারে৷ এটা একটা প্রাকৃতিক চক্র: মানুষ, উট, বায়োটপ এবং মানসম্পন্ন খাবার উৎপাদন৷”
গত কয়েকশ’ বছর ধরে উট প্রজনন রাইকাদের উপার্জনের মূল উৎস৷ নারী উটগুলোকে তাঁরা প্রজননের জন্য রেখে দেন৷ উটের দুধ খুবই স্বাস্থ্যকর৷ উটপালক এবং তাঁদের পরিবারের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান এটি৷ তাঁরা আগে বলতো, উটের দুধ বিক্রি অনেকটা নিজের সন্তান বিক্রির মতো ব্যাপার৷ কিন্তু সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন তাঁরা৷
এখন ভানওয়ারলাল রাইকা প্রতিদিন সকালে উটের দুধ পাশের একটি দুধ বিক্রির খামারে নিয়ে যান৷ তিন বছর আগে এলপিপিএস এই খামার চালু করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ উট বিক্রি করে ফেলি৷ কিন্তু তখনই এই সংগঠন উটের দুধ বিক্রি শুরু করে৷ ফলে আমি আবার উটের পাল ফিরিয়ে আনি৷ এখন উটের দুধ বিক্রির মাধ্যমে আমি আমার পরিবারের অন্নসংস্থান করতে পারছি৷ এখন এই সংগঠন যদি কাল থেকে আবার দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমার উটের পাল আবার বিক্রি করে দিতে হবে৷”