আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও বাকি চার জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
ছেলে হত্যার এমন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা করি এ রায় দ্রুত কার্যকর হবে। বরাবরই আমি বলে আসছি, হত্যার মাস্টারমাইন্ড আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তার কারণেই আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
‘নয়ন বন্ডের সঙ্গে গোপন বিয়ের পর মিন্নি আমার ছেলেকে বিয়ে করে। সেই বিয়েই আমার ছেলের জীবনে কাল হয়েছে। আমি মহান আল্লাহ দরবারে শুকরিয়া জানাই, আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।”
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে যখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং গ্রুপ বন্ড ০০৭ এর সদস্যরা। মুঠোফোনে ধারণকৃত রিফাতকে কোপানোর একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ফুটেজে মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এমনটা দেখা যায়।
ওইদিন বিকেলে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত শরীফ। ঘটনার পরের দিন ২৭ জুলাই নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদি হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এতে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষি রাখা হয়। ২ জুলাই ২০১৯ তারিখ ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ০০৭ বন্ড গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড। এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মিন্নির গতিবিধি সন্দেহে নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার বাদি নিহত রিফাতের বাবা দুলাল।
পরে ১৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে ভোরে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। ওই রাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২৯ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে উচ্চ আদালত। ৩ সেপ্টেম্বর পর কারাগার থেকে মুক্ত হন মিন্নি।
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। ঘটনায় জড়িত প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ জন ও কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রাপ্তবয়ষ্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭নং আসামি রাখা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনসহ বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে।
বুধবার (৩০ সেপ্টম্বর) বেলা ১.৫০ টায় এ মামলার রায় প্রদান করেন। মামলায় রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, টিকটক হৃদয় ও হাসানকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান মিয়া।
রুদ্র রুহান/সনি