যেসব বাংলাদেশি তাঁদের কর্মস্থল সৌদি আরবে ফিরে যেতে চান তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে সৌদি সরকার।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে ফোনে বলেন, ‘মাত্রই আমাদের রাষ্ট্রদূত আমাকে ইতিবাচক ফলাফল জানাতে ফোন করেছিলেন।’
যাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া রোববার থেকে শুরু হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের আকামা আরো ২৪ দিন বৈধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে।
ড. মোমেন বলেন, সৌদি সরকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অবতরণের অনুমতি দিয়েছে যা বাংলাদেশিদের সুষ্ঠুভাবে সেখানে ফেরাতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সরকারও সব সৌদি এয়ারলাইনসকে এ দেশে অবতরণ এবং বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে নেওয়ার অনুমতিও দিয়েছে।
পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমও এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘সৌদি আরব সরকার আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিচের সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে,
১. আকামার মেয়াদ আরবি সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (মানে আজ থেকে আরো ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে।
২. বাংলাদেশ বিমানকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে মোট চারটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৩। ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের ভিসা অফিস রোববার থেকে খোলা থাকবে যেখানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলি মেনে কনসুলার সেবা প্রদান করা হবে।
এর আগে দেশে আটকা পড়াদের জন্য মোট তিন দফায় বাংলাদেশিদের আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।
আকামার সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের পর আকামার মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস।
সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার জন্য ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ানো এবং বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা করার দাবিতে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে প্রবাসী শ্রমিকরা।
সকালে কারওয়ান বাজারে সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা এবং সাড়ে ৯টার দিকে সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে অবস্থান নেয় বলে জানান হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের দিকে যায়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের ভবনের বাইরের রাস্তা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীদের অন্য একটি দল জাতীয় প্রেসক্লাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
প্রবাসী শ্রমিকরা জানান, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারলে চাকরি হারাবেন।
সৌদি আরবের চাকরিতে যোগ দিতে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকেটের দাবিতে কয়েকদিন ধরে কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা।
করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় সাত মাস পর ১ অক্টোবর থেকে সৌদি আরবে ঢাকা থেকে বিমান চলাচলের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৌদিয়া এয়ারলাইনসের ঢাকা কার্যালয় বিমানের টিকেট দেওয়া স্থগিত করায় প্রবাসী শ্রমিকদের এ বিক্ষোভের সূচনা হয়।
সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকব্বির হোসেন জানিয়েছিলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদিতে ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমোদন পেয়েছে তারা। তবে, তিনি আরো জানান যে, বিমানের আসন বরাদ্দের সুযোগ দেওয়ার আগে সে দেশে বিমান অবতরণের অনুমতি পেতে হবে। সৌদি আরবের কাছ থেকে এখনো তাঁরা এ অনুমোদন পাননি।
‘ফলে, যাত্রীদের মধ্যে এখনই আসন বরাদ্দ শুরু করা সম্ভব না। দেশটি থেকে বিমান অবতরণের অনুমতি পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হবে,’ বলেন বিমানের এমডি।