বৃহস্পতিবার রাত ৮:২৮

১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল

আইএমএফের শর্ত মেনে বাজারভিত্তিক ডলার

আইএমএফের ঋণের দুটি কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন টানাপোড়েনের পর অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই পক্ষ। আইএমএফের শর্ত মেনে টাকার সঙ্গে ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সীমার মধ্যে দর ওঠানামা করতে দিত। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে সেই সীমা থাকলো না।

আইএমএফের সমঝোতার কারণে বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ কয়েকটি সংস্থার ২২০ কোটি ডলার জুনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে ৩৫০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

পরে সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে আইএমএফ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতা হয়েছে। আইএমএফের পর্ষদ অনুমোদন দিলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড় হবে। এদিকে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিন গতকাল প্রতি ডলারের দর ১২২ থেকে বেড়ে ১২৩ টাকা হয়েছে। 

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেন, সব ব্যাংকের সহায়তায় বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে তিনি আশা করেন। দুবাইয়ের কিছু এক্সচেঞ্জ কোম্পানি হয়তো বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশের এখন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার শক্তি আছে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে তারা আত্মবিশ্বাসী। বাজারে হস্তক্ষেপের জন্য ৫০ কোটি ডলারের একটি তহবিল করা হয়েছে।

গভর্নর বলেন, গত আট মাসে সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে।  রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ভালো অবস্থায় আছে। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, আগামীতে আরও কমবে। গত আট মাসে বিনিময় হারে কোনো অস্থিরতা নেই। কোনো কৃত্রিমতা ছাড়াই বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ডলার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। তবে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা চালুর মানে এই নয়, যে কোনো দরে কেনা যাবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, চালের দর যদি ৬০ টাকা হয় ক্রেতা ৬০, ৫৯ বা ৬১ টাকায় কিনবে। কিন্তু কেউ যদি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কেনে, তাহলে সেখানে কারসাজি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবেই বিষয়টি দেখবে। বড় পরিশোধের দরকার হলে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে কিনবে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার দেবে।

তিনি বলেন, ডলার স্থিতিশীল রাখতে হলে বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে স্থিতিশীলতা রাখতে হবে। রপ্তানি-রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি রাখতে হবে। আমদানি বাড়বে, তবে সংযতভাবে। সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারলে বিনিময় হারও ভারসাম্যহীন হবে না। বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে পারলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বিনিময় হার স্থিতিশীল করার একটি উপাদান সুদহার। এখন সুদহার বেশি থাকায় টাকার মূল্যমান ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তিনি মনে করেন, অযৌক্তিকভাবে কোনো দরে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার দরকার হবে না। বাজারে যথেষ্ট সরবরাহ আছে। কোনো ব্যাংক অযৌক্তিক কিছু করছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা তদারকি করবে।

গভর্নরের ঘোষণার কিছুক্ষণ পর একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সার্কুলারে গত ৩১ ডিসেম্বর বিনিময় হার-সংক্রান্ত জারি করা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে ডলার বেচাকেনার দর নির্ধারণ করবে। বাজারে লেনদেনের ভিত্তিতে প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে একটি রেফারেন্স বেঞ্চমার্ক দর ঘোষণা করা হবে। আর তদারকির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিদিন দুইবার ডলার বেচাকেনার তথ্য দিতে হবে। 







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে