সোমবার সন্ধ্যা ৬:০৬

১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২০শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল

অবশেষে সই হলো যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি

কয়েক মাস আলোচনার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার লক্ষ্য ইউক্রেনের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ যৌথভাবে কাজে লাগানো। এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন সুযোগ তৈরি হলো। খবর বিবিসি।

চুক্তির আওতায় দুই দেশ যৌথভাবে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করবে, যা ইউক্রেনের অবকাঠামো ও খনিজ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট বলেন, এই চুক্তি প্রমাণ করে দুই দেশই ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম বিরল খনিজের মজুদ রয়েছে ইউক্রেনে—বিশেষ করে গ্রাফাইট, টাইটানিয়াম ও লিথিয়াম। এই খনিজ পদার্থগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প খাতে অপরিহার্য।

এই চুক্তির সময়টা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের খনিজ নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎস গড়ে তুলতে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ চীনের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় সময় বুধবার (৩০ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানায়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে দেশটিতে যে বিপুল সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এই চুক্তির মাধ্যমে তা নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

চুক্তির অন্যতম মূল উদ্যোক্তা ইউক্রেনের ফার্স্ট ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো। তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ওয়াশিংটনে গিয়ে বলেন, এই তহবিল আমাদের দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।

তিনি আরও জানান, চুক্তিতে খনিজ, তেল ও গ্যাস খাতের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তবে সম্পদের মালিকানা থাকবে ইউক্রেনের। অংশীদারিত্ব হবে সমান এবং এটি বাস্তবায়নের আগে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

চুক্তির আওতায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)-সহ বেশ কিছু সহায়তা পাবে ইউক্রেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তিকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পূর্বশর্ত হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব সামরিক সহায়তার মূল্য ফেরত চেয়েছিলেন।, তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে তার কিছু দাবি নমনীয় হয়েছে।

এর আগে চুক্তির প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ইউক্রেন কিছু শর্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করে, যা চূড়ান্ত স্বাক্ষরে বিলম্ব ঘটায়। মূলত পুনর্গঠন তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।

চুক্তিটি ফেব্রুয়ারিতেই সই হওয়ার কথা থাকলেও হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডা এবং পরবর্তীতে ভ্যাটিকানে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম, এমন একটি চুক্তিতে আপনি স্বাক্ষর করলে খুবই ভালো হবে। কারণ রাশিয়া অনেক বড় ও শক্তিশালী। রাশিয়া কেবল এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তা আদায় করে নেবে।

এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও জোরালো করল। পাশাপাশি ইউক্রেনও তার অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য একটি নতুন বিশ্বশক্তির সহায়তা নিশ্চিত করল।

এই চুক্তির ফলাফল কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং এর প্রভাব রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক খনিজ বাজারে কীভাবে পড়ে, তা এখন দেখার বিষয়।







© সকল স্বত্ব- সমাজ নিউজ -কর্তৃক সংরক্ষিত
২২ সেগুনবাগিচা, ৫ম তলা, ঢাকা- বাংলাদেশ।
ই-মেইল: news@somajnews.com, ওয়েব: www.somajnews.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডিজাইন: একুশে