গত শনিবার ৭ জুলাই এসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন জাতীয় দলের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। সাথে ছিলেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ও পুত্র আরহাম ইকবাল খান। পুর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী দেশে ফেরার কথা ছিল আগামী আগস্ট মাসের শুরুতে। পরিবার নিয়ে থাকার জন্য লন্ডনে এক মাসের জন্য একটি বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎ করেই রোববার একটি মাত্র ম্যাচ খেলেই গতকাল মঙ্গলবার রাতে ‘ব্যক্তিগত কারন’ দেখিয়ে লন্ডন থেকে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বাংলাদেশের বিমানে উঠেন তামিম। জানা গেলো তামিমের দেশে ফিরে আসার খবর।
অথচ, এসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ৮-৯টি ম্যাচ খেলার কথা ছিলো বাঁহাতি এই ওপেনারের । এসেক্সের হয়ে গত রোববার কেন্টের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচটি খেলে এক ছক্কাসহ ৭ রান করেন তামিম।
হুট করে কেন এমন সিদ্ধান্ত ? তা নিয়ে কৌতুহল ছিলো কোটি ক্রিকেট ভক্তের। নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যেও প্রকাশ হচ্ছিলোনা এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্য কাহিনী।
এর আগে তামিমের আকস্মিক দেশে ফেরার ‘ব্যক্তিগত’ কারণ আসলে কী, জানতে চাইলে তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সংবাদমাধ্যমে। স্পষ্টই তিনি জানিয়ে দেন,নিজেই দেশে ফিরে এসে কারণ জানাবেন তামিম ।’
তামিমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রেও জানা যায় ‘খুবই ব্যক্তিগত এবং জরুরী প্রয়োজনে’ এসেক্স থেকে ফিরছেন তামিম। এই সময়ে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানাতে সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কাউন্টি ক্লাব এসেক্স তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ব্যক্তিগত’ কারণে তামিম ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্ত থেকেই আর দলের সঙ্গে নেই তামিম। এই সময়ে তামিমের ‘প্রাইভেসি’ রক্ষা করতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে কাউন্টি দলটির বার্তায়। তবে সেই কারণটা প্রকাশ করেনি ক্লাবটি।
বিবৃতিতে ইংলিশ কাউন্টির ক্লাবটি আরও লিখেন, ‘আমরা তার মঙ্গল কামনা করছি। এই সময়ে তামিমের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি সম্মান জানালে আমরা খুশি হব।’
তবে ইতমধ্যে বেড়িয়ে এসেছে এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে তামিমের ফিরে আসার পেছনের কারন। সম্ভাব্য কারন উল্লেখ করে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে, তামিমের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার ‘মাথায় হিজাবের কারনে’ সেখানে একদল স্থানীয় সন্ত্রাসীর রোষানলে পড়েছিলেন তামিম ও তার পরিবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালক জানিয়েছেন, ‘তামিম ও তার পরিবারকে ধাওয়া করেছিল স্থানীয় কয়েকজন লোক। দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ায় তাদের কিছু হয়নি। এ ঘটনার পরই তামিম দেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।’ আক্রমণকারীদের হাতে অ্যাসিড ছিল বলেও শুনেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ বোর্ড পরিচালক জানান, ‘তামিমের স্ত্রী মাথায় হিজাব পরেন। হয়তো সে কারণেই তাঁদের টার্গেট করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি তামিমকে।
তামিমের ঘনিষ্ঠ সুত্রের বরাতে প্রকাশ, স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ও পুত্র আরহাম ইকবাল খানকে নিয়ে ৭ জুলাই ইংল্যান্ডে যান তামিম। দেশে ফেরার কথা ছিল আগামী মাসের শুরুতে। পরিবার নিয়ে থাকার জন্য লন্ডনে এক মাসের জন্য একটি বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি।
গত পরশু রাতে সপরিবার সেখানকার স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরছিলেন তামিম ইকবাল। গাড়িতে উঠার আগেই কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি আকস্মিক তাদের পিছু নেয়। একপর্যায়ে তামিমের সন্দেহ হলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যাবার সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তামিমদের ধাওয়া করে। এসময় আতংক মাথায় কোনরকমে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছান তারা । তবে এই ঘটনা লন্ডনের ঠিক কোন জায়গায় ঘটেছে, সেটি কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
বিসিবির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনার পর ‘আতঙ্কিত’ তামিম পরিবার ক্লাব কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে মঙ্গলবার রাতেই লন্ডন থেকে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দেশের বিমান ধরেন।
প্রসঙ্গত, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাটে ভিন্ন মত ও বর্ণের মানুষের ওপর কে বা কারা অ্যাসিড ছুড়ে মারছে’এমন সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্বগনমাধ্যমে।
গত ২১ জুন ইস্ট লন্ডনের বেকটনে রেশম খান ও জামিল মুক্তার নামে দুজনের ওপর এ রকম আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পথচলতি মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়াসহ অন্যান্য আক্রমণের ঘটনা তো ঘটছেই। তামিমের ঘনিষ্ঠ সুত্র বলছে, ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে এসব নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তামিম।
প্রথম ম্যাচে তামিম মাত্র ৭ রান করে আউট হন। তার পরের খেলা ছিল আগামী বৃহস্পতিবার। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে অনাপত্তিপত্র পেয়েছিলেন আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর এসে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের জন্য জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা ছিল।